ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম - Nid Card Signature Change

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম - Nid Card Signature Change

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর যতই অসুন্দর হোক না কেন তাতে নাগরিকের কোন কাজে সমস্যা হয় না। তারপরও কিছু কিছু নাগরিক চান যে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করে এনআইডি কার্ডের তথ্য আপডেট রাখতে। সেই সকল সচেতন নাগরিকের উদ্দেশ্যে আজকের এই পোষ্ট। 


এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম কি? কি কি উপায়ে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করা যাবে এবং কি কি কাগজপত্র লাগবে। বিস্তারিত পড়তে থাকুন সঠিক পরামর্শ পাবেন।

কেন ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর অসুন্দর হয়?

সর্বপ্রথম ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরীর লক্ষ্যে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। তখন মার্কার কলম দিয়ে সাদা কাগজের উপর আবেদনকারীর নাম লিখে খুব কম রেজুলেশনের ওয়েবক্যাম্প দ্বারা ছবি ক্যাপচার করে স্বাক্ষর হিসেবে সেভ করা হতো। ফলে ভোটার আইডি কার্ডের উপর অসুন্দর স্বাক্ষর আসতো।

২০১১ সালের দিকে নতুন ভোটার নিবন্ধন করার জন্য ডিজিটাল সিগনেচার প্যাডের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর নেয়া শুরু হয় এবং এখন পর্যন্ত ডিজিটাল সিগনেচার প্যাড ব্যবহার হয়ে আসছে। 

বর্তমানে ডিজিটাল সিগনেচার প্যাডের মাধ্যমে স্বাক্ষর নেয়ার ফলে কিছুটা হলেও স্বাক্ষরগুলো সুন্দর হচ্ছে। তবে অধিকাংশ মানুষই তাদের স্বাক্ষর নিয়ে সন্তষ্ট নয়। কারণ কলম দিয়ে সাদা কাগজে লেখা আর সিগনেচার প্যাডে লেখার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। 

লক্ষ্য করা গেছে যাদের হাতের লেখা সুন্দর নয় তারা সিগনেচার প্যাডে স্বাক্ষর করার পর আউটপুট ভালো হয় না। লাইন বেকে যায় কিংবা অক্ষরের মাত্রে উপর নিচে হয়ে যায়। সময় বাচানোর জন্য অপারেটরগণ আবেদনকারীকে একাধিকবার সিগনেচার করার সুযোগও দেয় না। ফলে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষরের মান খুব বেশি ভালো হয় না। 

কিন্ত যাদের হাতের লেখা অতি সুন্দর তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় সিগনেচার প্যাডে স্বাক্ষর করার পর আউটপুট খুবই সুন্দর আসে। কিংবা যাদের সিগনেচার প্যাডে স্বাক্ষর করার অভ্যাস আছে তাদের স্বাক্ষরগুলো ভালো হয়।

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার প্রয়োজনীতা কি?

২০০৭-২০০৮ সালের দিকে অনেকেই না বুঝে সম্পূর্ণ নাম লিখে স্বাক্ষর করেছিলো।  কিন্ত পরবর্তীতে অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পেরে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে।

নতুন ভোটার হওয়ার সময় বেশিরভাগ ভোটারই ছাত্র জীবনে থাকে। ফলে তারা ইনিশিয়াল স্বাক্ষরের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা না বুঝে সম্পূর্ণ নাম লিখে স্বাক্ষর করে থাকে। কিন্ত যখত তারা চাকরি কিংবা কর্মজীবনে প্রবেশ করে তখন প্রত্যেকেই ইনিশিয়াল স্বাক্ষরের ব্যবহার শুরু করে থাকে। অপরদিকে এনআইডি কার্ডের স্বাক্ষর সম্পূর্ণ নামে থাকায় তা অসামঞ্জস্য দেখায়।

দেখা গেছে ডেটা এন্ট্রির সময় ভুলবসত একজনের স্বাক্ষর অন্য জনের এনআইডি কার্ডে চলে এসেছে। ফলে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়ে থাকে।

অনেক সময় দেখা যায় পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক একাউন্ট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত স্বাক্ষরের সাথে এনআইডি কার্ডের স্বাক্ষর মিল না থাকলে সমস্যা হয়। তাই প্রয়োজন হয় ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন কিংবা আপডেট করা।

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার আবেদন পদ্ধতি

ভোটার আইডি কার্ডের ছবি পরিবর্তন করার মত ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার নিয়ম একটাই এবং একটি মাত্র পদ্ধতিতেই আবেদন করা সম্ভব। নিম্নে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো-

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তনের আবেদন করা যায় না। Nid Card Signature Change করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ২ নং সংশোধনী ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে। 

Nid Card সংশোধন করার জন্য নির্ধারিত ফি বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। যাদের বিকাশ একাউন্ট নেই তারা চাইলে রকেট অ্যাপ দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি পরিশোধ করতে পারবেন খুব সহজে।


Nid Card Signature Change করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম ২ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। আপনি চাইলে লিংকে ক্লিক করে ডাউনলোড করতে পারেন এবং নিকটস্থ কোন কম্পিউটারের দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। 

আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম - Nid Card Signature Change Application

নিচের নমুন ছবি লক্ষ্য করুন এবং উল্লেখিত নির্দেশাবলী অনুসরণ করে আপনার আবেদন ফরম পূরণ করুন।

Nid Card Signature Change Application

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আবেদন ফরমের ১ নং ক্রমিকের (ক) তে আবেদনকারীর নাম লিখুন। ১ নং ক্রমিকের (খ) তে আবেদনকারীর এনআইডি নম্বর লিখুন। ২ নং ক্রমিকে কিছু লেখা লাগবে না। ৩ নং ক্রমিকে যে টিবিল রয়েছে তার (ঝ) রো এর দ্বিতীয় কলামে বর্তমানে ভোটার আইডি কার্ডে যে স্বাক্ষরটি রয়েছে সেটি হুবহু লিখুন এবং (ঝ) রো এ তৃতীয় কলামে (চাহিত সংশোধিত তথ্য) যে স্বাক্ষরটি হবে সেটি লিখুন।

আবেদনকারীর স্বাক্ষর/টিপসহি এর স্থানে আইডি কার্ডের বর্তমান স্বাক্ষর করুন। তার নিচে আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর লিখুন।

টেবিলের চতুর্থ কলামে (সংযুক্ত দলিলাদি/মন্তব্য) আবেদনের সাথে যে সকল কাগজপত্র জমা দেবেন সেগুলোর নাম পর্যায়ক্রমে লিখুন। টেবিলের খালি রো-গুলো কলম দিয়ে আড়া-আড়ি দাগ দিয়ে কেটে দিতে পারেন।

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার জন্য তেমন কোন জটিল কাগজপত্র জমা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। 


❖ নমুনা স্বাক্ষরের কপি: আপনি যে স্বাক্ষরটি এনআইডি কার্ডে চাইছেন সেই স্বাক্ষরটি বর্তমানে কোথায় ব্যবহার করেন তার একটি ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দেবেন।

❖ এনআইডি কার্ডের কপি: অবেদনের সাথে অবশ্যই আবেদনকারীর এনআইডি কার্ডের কপি জমা দেবেন।

❖ পে স্লিপের কপি: বিকাশ কিংবা রকেট অ্যাপ দিয়ে এনআইডি সংশোধন ফি জমা দেয়ার পর যে Receipt টি ডাউনলোড হয় সেটি প্রিন্ট করে আবেদনের সাথে জমা দেবেন।

উল্লেখিত নির্দেশাবলী অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আবেদনের সাথে পিন-আপ করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দেবেন। অফিসে কর্মরত স্টাফ আপনার আবেদন রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করে আবেদনের নিচের অংশ কেটে আপনাকে দেবে। এটাকে প্রাপ্তি স্লিপ বলে যা সংরক্ষণ করবেন।

আবেদন রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি হওয়ার পর অফিস থেকে চলে আসা যাবে না। কর্মরত স্টাফের কাছে জিজ্ঞাসা করবেন সিগনেচার কখন আপডেট করে নেয়া হবে। তিনি আপনাকে নির্দিষ্ট কোন দিনে পুনরায় অফিসে আসার জন্য বলতে পারেন অথবা আবেদন জমা দেয়ার দিনই আপনার স্বাক্ষর আপডেট করে নিতে পারে। 

আপনার যদি জরুরী ভিত্তিতে সংশোধনের প্রয়োজন হয় এবং স্টাফ যদি পুনরায় আরো একদিন অফিসে আসার কথা বলে তাহলে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসারের সাথে কথা বলবেন। স্যারকে আপনার সমস্যার কথা বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবেন যাতে ওই দিনই আপনার স্বাক্ষর আপডেট করে নেয়।

অফিসার অনুমতি দিলে আপনার আবেদনে সই করে সার্ভার রুমে পাঠিয়ে দেবে। সেখানে গিয়ে ডিজিটাল সিগনেচার প্যাডের উপর স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর করার সময় সুন্দর করে স্বাক্ষর করবেন, ভুল হলে কিংবা অসুন্দর হলে পুনরায় স্বাক্ষর দেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন। স্বাক্ষর দেয়া শেষ হলে অফিস থেকে চলে আসবেন।

আবেদনের বাকী কাজ অফিসিয়ালী হবে। এক্ষেত্রে কিছুটা সময় অবশ্যই লাগবে ততদিন অপেক্ষা করুন। আপনার আবেদন অনুমোদন হলে মোবাইলে ম্যাসেজ আসতে পারে আবার নাও আসতে পারে (এক্ষেত্রে বিষয়টি অনিশ্চিত)। যদি ম্যাসেজ আসে তাহলে ম্যাসেজ আসার ২-৫ দিন পর অফিসে গিয়ে সংশোধিত এনআইডি কার্ডটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

আর যদি মোবাইলে ম্যাসেজ না আসে তাহলে ৫-৭ দিন পর আবার অফিসে গিয়ে খোজ নিয়ে আসতে হবে আবেদন অনুমোদন হয়েছে কি না। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। 

এই ছিলো ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষর পরিবর্তন করার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। এ বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টস করুন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজে ম্যাসেজ করুন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে অবশ্যই চেষ্টা করবো। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ..!


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন