ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন প্রক্রিয়া জটিল কোন বিষয় না। কিন্ত সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি বা অনুমোদন হওয়ার বিষয়টা সহজ নয়। Nid সংশোধনের আবেদনে চাহিত তথ্য এবং কাগজপত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে সে আবেদন সহজে নিষ্পত্তি হয় না। আমাদের আজকের বিষয় হচ্ছে ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন। যাদের ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম ভুল হয়েছে তারা সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন।

তাহলে মায়ের নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে করণীয় কি? কি কি উপায়ে আবেদন করা যাবে, কি কি কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে এবং কি ধরণের আবেদন সহজে নিষ্পত্তি হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

{tocify} Stitle={Custom Title}

ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধনে কেন ভোগান্তি হয়

জাতীয় পরিচয়পত্র বা Nid Card সংশোধন নিয়ে মানুষের অভিযোগের কোন শেষ নেই। যাদের এনআইডি কার্ডে মায়ের নাম ভুল হয়েছে এবং সংশোধনের আবেদন করেছেন। কিন্ত আবেদন পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে অনুমোদন হচ্ছে না। তারা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন। 

ধরুন মায়ের আইডি কার্ডে মায়ের নাম মোছাঃ রহিমা বেগম। কিন্ত আপনার সার্টিফিকেটে মায়ের নাম দেয়া রয়েছে মোছাঃ রাহিলা খাতুন এবং ্‌আপনি সার্টিফিকেটের তথ্য অনুযায়ী ভোটার হয়েছেন। পরবর্তীতে মায়ের আইডি কার্ডের সাথে আপনার আইডি কার্ডের মিল না থাকার কারণে সংশোধনের আবেদন করেছেন। 

আবেদনটি অনুমোদন না হয়ে বহুদিন ধরে পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কারণ আপনি আবেদনের সাথে যতই বোর্ড সার্টিফিকেট জমা দেন না কেন Nid কার্ডে মায়ের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে মায়ের আইডি কার্ডের কপি এবং পিতার আইডি কার্ডের কপি জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। মাতা পিতার আইডি কার্ডের তথ্যের সাথে আবেদনে চাহিত তথ্যের মিল না থাকলে সে আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করে দেয় না।

ভোটার হওয়ার সময় ভোটার নিবন্ধন ফরমে মায়ের নাম যা লিখে ভোটার হবেন। পরিবর্তীতে এনআইডি কার্ড পাওয়ার পর সেই নাম পরিবর্তন করতে গেলে সেটা নাও হতে পারে। কারণ অফিসের কাছে আপনার স্বাক্ষর করা ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ রয়েছে। তাহলে এখন কেন নাম পরিবর্তন করতে চান। এই প্রশ্নের আশানুরুপ উত্তর আপনি দিতে পারবেন না।

মায়ের আইডি কার্ডে এক নাম, আপনার আইডি কার্ড ও সার্টিফিকেটে এক নাম, অন্য ভাইয়ের আইডি কার্ডে এক নাম, বোনের আইডি কার্ডে এক নাম এরকম বিভিন্ন জনের আইডি কার্ডে বিভিন্নভাবে নাম লেখা থাকলে এবং সেই নাম সংশোধনের আবেদন করলে ভোগান্তি হয়।

অর্থাৎ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে চাহিত তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সেই সাথে যুক্তিসংগত কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। তাহলে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কম হবে।

ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন প্রক্রিয়া

ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন করার জন্য দুইটি উপায়ে আবেদন দাখিল করা যায়। একটা উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে আবেদন করা, আরেকটি হচ্ছে অনলাইনে সংশোধনের আবেদন করা। 

অফিসে গিয়ে মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন

আপনি যদি সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন করতে চান তাহলে অফিসে থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম ২ সংগ্রহ করে সেটি পূরণ করবেন। আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম খুব সহজ।

ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন আবেদন ফরম

  • ফরমের ১ নং ক্রমিকের (ক) তে আবেদনকারীর নাম লিখতে হবে বাংলায়।
  • ফরমের ১ নং ক্রমিকের (খ) তে আবেদনকারীর Nid Card এর নম্বর লিখতে হবে।
  • ফরমের ২ নং ক্রমিকে কিছু লেখা লাগবে না।
  • ফরমের ৩ নং ক্রমিকে যে টেবিল থাকবে সেই টেবিলের (ঘ) রো এর দ্বিতীয় কলামে মায়ের ভুল নামটি লিখতে হবে এবং তৃতীয় কলামে মায়ের সঠিক নাম লিখতে হবে।
  • চতুর্থ কলামে আবেদনের সাথে সংযুক্ত দলিলাদির নামগুলো লিখেত দিতে হবে।
  • তারপর ্ফরমের নিচের দিকে ডান পাশে আবেদনকারীর স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষরের নিচে আবেদনকারীর পুরো নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর লিখতে হবে। উপরের নমুনা ছবিতে যেমনটি দেখতে পাচ্ছেন।

আবেদন ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় কাজপত্রগুলো আবেদনের সাথে পিন-আপ করে অফিসের হেল্পডেস্ক এ জমা দিতে হবে। তবে আবেদন জমা দেয়ার আগে অবশ্যই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দিতে হবে।

আপনি চাইলে নিজের বিকাশের মাধ্যমে এনআইডি ফি জমা দিতে পারেন। অথবা রকেটের মাধ্যমেও জমা দিতে পারেন। আর যদি দুইটার একটাও আপনার না থাকে তাহলে যে কোন দোকান থেকে এনআইডি ফি জমা দিয়ে আসতে হবে।

অনলাইনে মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন

অফিসে গিয়ে মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন করার চেয়ে অনলাইন আবেদন করা সহজ এবং ঝামেলামুক্ত। Bangladesh Nid Application System এর ওয়েবসাইট https://services.nidw.gov.bd এ ভিজিট করে একটি Nid একাউন্ট তৈরী করুন।অথবা একাউন্ট থাকলে লগইন করার পর প্রোফাইল অপশন দেখতে পারবেন সেখানে ক্লিক করবেন। তারপর এডিট বাটনে ক্লিক করলে সকল তথ্যই এডিট করা যাবে।

তবে অনলাইনে মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন করার আগে বিকাশ কিংবা রকেটের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দিতে হবে। 

ভোটার আইডি কার্ড মায়ের নাম সংশোধন

সেখান থেকে শুধুমাত্র মায়ের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে মায়ের নাম সঠিকভাবে লিখুন। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন। 

মায়ের নাম পরিবর্তন

এই পেজে আসার পর দেখতে পাবেন মায়ের নাম বর্তমানে কি রয়েছে এবং  আপডেটেড নাম কি হবে সেটা দেখাবে। যদি মায়ের নাম লেখা ঠিক থাকে তাহলে পরবর্তী বাটেনে ক্লিক করতে হবে। তাছাড়া এই পেজে আর কোন কাজ নেই।
মায়ের নাম সংশোধনের আবেদনের ধরন

ট্রানজেকশন অপশনে আসার পর দেখা যাবে আপনি সংশোধন ফি কত টাকা ডিপোজিট করেছেন। এছাড়া এখান থেকে আবেদনের ধরণ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সিলেক্ট করতে হবে। আর বিতরণের ধরণ Regular সিলেক্ট করতে হবে। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ডকুমেন্টস আপলোড

এই পেজে আসার পর আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। মোবাইলে দিয়ে ছবি তুলে কিংবা পিডিএফ ফাইল তৈরী করে আপলোড করা যাবে। বাম পাশ থেকে কাগজের নাম সিলেক্ট করে ডান পাশ থেকে আপলোড বাটনে ক্লিক করে ফাইল লোকেশনে যেতে পারবেন।

যে সকল কাগজপত্র আপলোড করবেন সেগুলো নিচে দেখা যাবে। কাগজপত্র আপলোড শেষ হলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে। 

মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন

এই পেজে আসার পর আবেদন নিশ্চিত করতে হবে। যদি সবকিছু সঠিক থাকে তাহলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলেই ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধনের আবেদন হয়ে যাবে। 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম ২ ডাউনলোড করার জন্য পুনরায় প্রোফাইল অপশনে গেলে সেখানে এডিট বাটনের পরিবর্তে ডাউনলোড বাটন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে ফরমটি ডাউনলোড করে রেখে দিতে পারেন।

ভোটার আইডি কার্ড মায়ের নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে

ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন করতে যে সকল কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দেয়া যেতে পারে সেগুলো নিম্নরুপ-

  • আবেদনকারীর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • আবেদনকারীর শিক্ষা সনদ (JSC/SSC/HSC) ইত্যাদি (যদি থাকে)
  • মায়ের Nid Card এর কপি
  • বাবার Nid Card এর কপি
  • সকল ভাই বোনের এনআইডি কার্ডের কপি। ভাই বোনের এনআইডি কার্ড না থাকলে জন্ম সনদের কপি।
  • আবেদনকারী যদি ভোটার হওয়ার আগে পাসপোর্ট করে থাকেন তাহলে পাসপোর্টের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • আবেদনকারী যদি ভোটার হওয়ার আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে থাকেন তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • আবেদনকারী যদি চাকুরিজীবি হয়ে থাকেন তাহলে সার্ভিস আইডি কার্ডের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

উপরোক্ত কাগজপত্রের মধ্যে আপনার ক্ষেত্রে যে কাগজগুলো প্রযোজ্য সেগুলো আপনি আবেদনের সাথে জমা দেবেন। মনে রাখতে হবে যে, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন হয় শুধুমাত্র কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করে। কাগজপত্র দিয়ে প্রমাণ করতে পারলেই আবেদন নিষ্পত্তি হবে। অন্যথা আবেদন পেন্ডিং অবস্থায় থাকবে।

সহজে নিষ্পত্তিযোগ্য আবেদন

ভোটার আইডি কার্ডে যদি প্রকৃতই কোন ভুল হয়ে থাকে। তাহলে উপযুক্ত কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করলে সেগুলো সহজে অনুমোদন হয়ে যায়। কিন্ত যদি কোন সুবিধা পাওয়ার আশায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয় তাহলে সেগুলো পেন্ডিং থাকে। কারণ এমন ক্ষেত্রে উপযুক্ত কাগজপত্র জমা দেয়া সম্ভব হয় না। 

সঠিক বয়স না হতেই বিদেশ যাওয়ার জন্য বয়স বাড়িয়ে নতুন ভোটার হয়েছেন কিন্ত বিদেশে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে ভোটার আইডি কার্ডের বসয় সংশোধন করলে সহজে সেগুলো অনুমোদন হয় না।

মায়ের সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করলে এবং মায়ের আইডি কার্ডের সাথে আবেদনে চাহিত নামের মিল না থাকলে সেগুলোও সহজে অনুমোদন হয় না। 

অর্থাৎ সেই সকল আবেদনগুলো সহজে নিষ্পত্তি হয় যেগুলো প্রকৃত পক্ষেই ভুল এবং ভুলের বিপক্ষে শক্তপোক্ত ডকুমেন্ট জমা দেয়া সম্ভব হয়। তাছাড়া সুবিধা পাওয়ার আশায় অল্প কিছু কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করলে ভোগান্তি ছাড়া তেমন কোন ফল পাওয়া যায় না।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে, ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন করার প্রক্রিয়া সহজ হলেও যথাযথ কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দিয়ে প্রমাণ না করতে পারলে সে আবেদন অনুমোদন হয় না। তাই চেষ্টা করবেন পর্যাপ্ত পরিমাণ সাপোর্টিং ডকুমেন্ট আবেদনের সাথে জমা দেয়ার।

এই ছিলো ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। এ বিষয়ে যদি আরো তথ্য জানতে চান তাহলে কমেন্টস করবেন অথবা আমাদের ফেসবুক পেজে ম্যাসেজ করবেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবো। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের এ বিষয়ে অবগত করার জন্য শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ..!

2 মন্তব্যসমূহ

  1. মাশাল্লাহ, অনেক উপকারী একটি সেবা।
    আচ্ছা ভাইজান, অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদন ফরম প্রিন্ট করে কি আবার ইউনিয়ন অফিসে নিতে হবে! নাকি অনলাইনেই কাজ হয়ে যাবে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। অনলাইনে আবেদন করার ফরমটি প্রিন্ট করে কাছে রেখে দিতে পারেন। যদি কখনো উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন সম্পর্কে খোজ নেয়ার দরকার হয় তখন ফরমটি সাথে নিয়ে গেলে ভালো হয়।

      তাছাড়া অনলাইনে আবেদন করলে অফিসে গিয়ে ফরম এবং কাগজপত্র জমা দেয়া লাগে না। সবকিছু অনলাইনেই হয়ে যাবে আর অফিস থেকে আবেদনের উপর যে পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন আপনার মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে।

      মুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন